Monday, November 28, 2016

রিকশার চাকায় জীবন চলে সুমির

নিউজ ডেস্ক: কালো সালোয়ারের সঙ্গে শার্ট গায়ে। পায়ে প্লাস্টিকের স্যান্ডেল। গলায় রংচটা গামছা। মাথায় ক্যাপ। ছুটন্ত রিকশার চালকের আসনে এভাবেই দেখা গেল তাঁকে। নাম সুমি বেগম। রাজধানীর ব্যস্ততম নিউমার্কেট, লালবাগ, আজিমপুর এলাকায় পাঁচ মাস ধরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালাচ্ছেন। এই আয়েই তিনিসহ পরিবারের চারজনের জীবনের চাকা ঘুরছে।

বয়স কত—জানতে চাইলে সুমি বেগম কিছুটা হাবুডুবু খেলেন। বললেন, ‘বিয়া হইছিল ১৪ বছর বয়সে। এখন নিজের মাইয়্যার বয়স সাত বছর। আমার হইব ২৪ বছরের মতন।’
রাস্তায় সব পুরুষ রিকশাচালক। এর মধ্যে নারী হয়ে রিকশা চালাতে কেমন লাগে—এ প্রশ্নে সুমি বললেন, ‘যখন কাজে নামি, নিজেরে মেয়ে মনে করে নামি না। মেয়ে মনে করে নামলে তো চলব না।’ জানালেন, অনেক যাত্রী সহজে ভরসা করতে পারেন না বলে রিকশায় উঠতে চান না। তাই যাত্রী পান কম। দিনে রিকশার মালিককে ৩০০ টাকা জমা দেওয়ার পর হাতে থাকে ১০০ টাকার মতো। অন্যদিকে পুরুষ রিকশাচালকদের হাতে থাকে ৫০০ টাকার মতো। নিজে একটা রিকশা কিনতে পারলেও

কিছু টাকা জমানো সম্ভব হতো। বললেন, মাঝেমধ্যে পুরুষ চালকদের ‘নতুন আমদানি হইছে’ বা ‘পুরান পাগলে ভাত পায় না, আর এ তো নতুন পাগল’—এমন মন্তব্য শুনে মন খারাপ হয়।

মন খারাপের পালা শেষ হতেই মুখে হাসি নিয়ে সুমি বললেন, ‘ট্রাফিক পুলিশ রাস্তায় আমার রিকশা আটকায় না। যাত্রীরা অনেক সময় খুশি হইয়া বেশি ভাড়া দেয়। রিকশা থেকে নামনের পর যাত্রীরা বলে—আফা, আপনে তো ভালোই রিকশা চালান।’ বললেন, ‘কারখানায় সুতা কাটতাম। সেইখানের লোক ভালো ছিল না। গায়ে হাত দিতে চাইত। এক বাড়িত কাজ করতাম, কিন্তু বেতন নিয়া ঘুরাইত। আমার ওস্তাদ আলমগীর রিকশা চালানো শিখাইছে। তাই এখন রিকশা চালাই। এখন আর আমার গায়ে হাত দেওনের সাহস পায় না কেউ।’

রিকশার আগে তিন বছর রাজধানীতে ভ্যান চালিয়েছেন সুমি। এরও আগে ছোটবেলায় প্রতিবন্ধী বাবাকে সঙ্গে নিয়ে ভিক্ষা করতেন। বাবা মারা গেছেন। ছোট ভাই মানসিক প্রতিবন্ধী। ভাই ও সুমির মেয়েকে নিয়ে মা মাদারীপুরে গ্রামের বাড়িতে থাকেন। সুমির পাঠানো টাকা এবং মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে যা পান, তাই দিয়েই চলে সংসার।

সুমি কামরাঙ্গীরচরে একা থাকেন। সকালে রিকশা নিয়ে বের হন। কাজ শেষ করে রিকশা জমা দিতে দিতে রাত ১২টার মতো বেজে যায়। সারা দিনের খাবার খান হোটেলে। পাবলিক টয়লেটই ভরসা। দিনে ১০ থেকে ১২টি পান আর কাজের ফাঁকে কয়েক কাপ চা খান শরীর চাঙা রাখতে। কিন্তু প্রায় সময়ই টাকা বাঁচানোর জন্য দিনের খাবারে কাটছাঁট করেন।

সুমি বলেন, কারখানায় কাজ করার সময় প্রেমে পড়েন। তারপর অল্প বয়সেই বিয়ে করেন। তবে মেয়ে যখন তিন মাসের পেটে, তখন প্রথম বুঝতে পারেন স্বামী নেশা করেন। স্বামীকে ছেড়ে নিজেই চলে আসেন বাবা-মায়ের কাছে। তারপর স্বামীকে তালাক দেন। মেয়ে, মা, ভাই—তাদের কে দেখবে, সে কথা চিন্তা করে আর বিয়ে করেননি। এখন মেয়েকে শিক্ষিত করার স্বপ্ন দেখেন। মেয়ে পড়ছে প্রথম শ্রেণিতে। ইচ্ছা, অন্ততপক্ষে মেয়ের জীবন যাতে তাঁর মতো না হয়।

অদম্য সংগ্রামী সুমি বেগমের জীবনকাহিনি জেনে তাঁকে একটি রিকশা কিনে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে একটি ট্রাস্ট।-প্রথম আলো
২৮ নভেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর


SHARE THIS

Author:

0 comments: